পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় টিউটোরিয়াল -৬৫

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
অল্প কথায় উত্তর দাও
প্রশ্ন: বুদ্ধিজীবীদের কারা হত্যা করেছিল?
উত্তর : বুদ্ধিজীবী বলতে এ দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, জ্ঞাণী-গুণী, শিল্পী, সাহিত্যিক শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ইত্যাদি বরেণ্য ব্যক্তিদের বুঝি।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। তারপরও এ দেশের কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এদের কয়েকটি প্রধান সংগঠনের মধ্যে ছিল শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা এ দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের বাসস্থান থেকে ধরে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ও মিরপুরে তাদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার এক জঘন্য ও হীন চেষ্টা চালায়। জাতি হারায় বুদ্ধিজীবীদের। তারা সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. ফজলে রাব্বীসহ এ দেশের প্রথম সারির অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিকৃত লাশ পাওয়া যায়। তাদের স্মরণে আমরা প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।
সুতরাং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে রাজাকার, আলবদর, আল শামসসহ এ দেশীয় এক শ্রেণির দালালরা এ হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। বর্তমানে এদের বিচার হচ্ছে জাতি কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে।
অধ্যায়ের ভেতরের প্রশ্নগুলো
প্রশ্ন : মুজিবনগর সরকার কখন ও কোথায় গঠিত হয়েছিল? এ সরকারে কারা ছিলেন?
উত্তর : মুজিবনগর সরকার
মুক্তিযুদ্ধের কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে প্রথম যে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল তা-ই মুজিবনগর সরকার।
সময় : এ সরকার ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত হয়। কিন্তু শপথ নেয় ১৭ এপ্রিল।
স্থান : মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে এ সরকার শপথগ্রহণ করে।
যারা ছিলেন
রাষ্ট্রপতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। তার অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী : তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এ যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রশ্ন : আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তর : মুজিবনগর সরকার : মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রথম যে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় তা-ই মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।
গুরুত্ব : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে শাসন ও শোষণ করে। এ শাসন ও শোষণের হাত থেকে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তির নেশায় পাগল অথচ দিশাহারা এ জাতিকে দিকনির্দেশনার জন্য ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে এ সরকার শপথগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। তার অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দীন আহমদ।
* এ সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার কাজ দক্ষ হস্তে পরিচালনা করে।
* দেশ ও বিদেশে এ যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।
* দেশ-বিদেশের সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* এ সরকার গঠন দিশাহারা জনগোষ্ঠীর মনোবল বহুগুণ বৃদ্ধি করে। ফলে এ সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সুতরাং দেশে ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত ও সমর্থন আদায় করে সঠিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের পলাশীর আমবাগানে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল তা আবার ১৯৭১ সালে মুজিবনগরের আমবাগানে উদিত হয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব, ভূমিকা বা অবদান অনস্বীকার্য।

No comments

Powered by Blogger.