পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় টিউটোরিয়াল -৮৪
বাংলাদেশ
ও বিশ্বপরিচয়
আফরোজা
বেগম, সিনিয়র
শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা
ব্রিটিশ
শাসন
[পূর্বে
প্রকাশিত অংশের পর]
প্রশ্ন
: সিপাহী বিদ্রোহে বাংলার ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর
: পলাশী যুদ্ধের ঠিক ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও
সামরিক কারণে সিপাহীদের সঙ্গে ইংরেজদের যে মহাবিদ্রোহ হয় তা-ই ইতিহাসে সিপাহী
বিদ্রোহ বা, স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম নামে পরিচিত।
বাংলার
অবদান
*
১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয় বাংলায়। পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে
মঙ্গলবার পান্ডের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহের সূচনা হয়। পরে তা ধীরে ধীরে সারা ভারতে
ছড়িয়ে পড়ে। * ঢাকা, চট্টগ্রাম, বহরমপুরসহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় অভ্যুত্থান ঘটে।
*
এ সংগ্রাম সিপাহীদের বিদ্রোহ দিয়ে শুরু হলে পরবর্তীতে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত
প্রদেশ, অযোদ্ধা, বিহারসহ বাংলার সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল।
ইতিহাসবিদরা বলেন, ‘এ বিদ্রোহ ছিল গণবিদ্রোহের প্রতীক।’
বাংলার জনগণের সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহ পরবর্তীতে রাজনৈতিক ও স্বাধীনতার জাতীয়
সংগ্রামের স্বীকৃতি পায়। * ইংরেজরা এ বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করে। বাংলাদেশের ঢাকার
বাহাদুর শাহ পার্কে দেশপ্রেমী এসব বাঙালির ৭২ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। বাঙালিসহ
১,০০,০০০ ভারতীয়কে ইংরেজদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়। তাদের স্মরণে ১৯৪৭
সালে ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে নির্মিত স্মৃতিফলক এখনও এ বিদ্রোহে বাংলার অবদানে
সাক্ষী বহন করছে।
*
বাংলার জনগণের সমর্থনপুষ্ট এ সিপাহী বিপ্লব আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও
পারবর্তীকালের জন্য সব সংগ্রামের সূচনা বা সূতিকাগার হিসেবে কাজ করে।
তাই
এসব কাজের মধ্য দিয়ে সিপাহী বিদ্রোহে বাংলার অসামান্য অবদান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন
: সাহিত্যিকরা রাজনৈতিক আন্দোলনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেন?
উত্তর
: সাহিত্যিকরা রাজনৈতিক আন্দোলনকে, নিজের স্বাধীকার আন্দোলন আদায়ের জন্য রাজপথে
নেমে মিছিল করে না। তারা নিজেদের সৃজন মেধা দিয়ে, নিজের ক্ষুরধার সম্পন্ন লেখনী
দ্বারা পিছিয়ে পড়া ঘুমন্ত জাতিকে তাদের চেতনা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেন। তারা
তাদের গান, কবিতা ও লেখনীর মাধ্যমে জনগণকে চাঙা করে রাজনৈতিক চেতনা বোধের জন্ম
দেন। ফলে এগিয়ে চলে রাজনৈতিক আন্দোলন। যুগে যুগে বহু সাহিত্যিক তাদের শক্তিশালী
লিখনীর মাধ্যমে সমাজ ও জাতির পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। উনিশ শতকের শেষের দিকে বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম নবজাগরণ ঘটিয়েছেন। বেগম রোকেয়া তার নারীবাদী
লেখনীর মাধ্যমে সমাজে অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ নানা সাহিত্যিকের তীব্র,
জ্বালাময়ী লেখনীর কারণে ইংরেজ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে। ১৯৫২, ১৯৭১ সালের
নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে সাহিত্যিকদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শিল্প-সাহিত্যিকদের নাটক, ক্রোড়পত্র মুক্তিযোদ্ধা রক্তে
এনেছিল বাঁধভাঙা জোয়ার আর উদ্যম।
এভাবে
সারা বিশ্বে যুগে যুগে রাজনৈতিক আন্দোলনের পুরোটাজুড়েই থাকেন সাহিত্যিকরা। তারা
লেখনীর মাধ্যমে রাজনীতিকদের উদ্দীপনা জোগান। ফলে রাজনৈতিক আন্দোলন হয় আরও বেগবান ও
সাফল্যমণ্ডিত।
No comments