পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় টিউটোরিয়াল -৭২

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
আফরোজা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা, ঢাকা

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী কী ধরনের নির্যাতন-তাণ্ডব চালিয়েছিল?
উত্তর : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে শাসন ও শোষণ করে। এ শাসন ও শোষণের হাত থেকে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।
নির্যাতন * ২৫ মার্চ মধ্য রাতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। * তারপর ২৫ মার্চ মধ্য রাতেই ঢাকায় ঘুমন্ত, নিরস্ত্র, বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। এ অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন সার্চ লাইট।* অন্যান্য স্থানেও তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বাড়িঘর, দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় ও লুটপাট করে। বিদেশে সংবাদ প্রেরণের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। ঢাকা শহর পরিণত হয়েছিল বধ্যভূমি ও ধ্বংসস্তূপে। ২৬ মার্চ ঢাকার বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল লাশের গন্ধ। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রাত হল কালরাত। এটা ছিল বিশ্বের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড।* সেদিন এক রাতেই ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। * পরবর্তী ৯ মাস ধরেই পাকিস্তানি বাহিনীর এ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তারা চালায় নির্বিচারে লুটতরাজ ও ধরপাকড়। * গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়নি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।* তারা লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে সারা দেশের অগণিত স্থানকে বধ্যভূমিতে পরিণত করে। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়।
* পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা, লুণ্ঠন ও অত্যাচারের মুখে প্রাণভয়ে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এ সময় প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক, সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। মোটকথা, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী অকথ্য, নির্মম, জঘন্য, বর্বরোচিত নির্যাতন-তাণ্ডব চালিয়েছিল। আমরা সবাই এ নির্যাতনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছি।
প্রশ্ন : মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য বর্ণনা কর।
উত্তর : স্বাধীনতার টকটকে লাল সূর্যটি ছিনিয়ে আনতে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সঙ্গে এ দেশবাসীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ইতিহাসের পাতায় এ যুদ্ধই হল মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাহায্য-সহযোগিতায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।* মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা আমাদের এ দেশটি পেয়েছি। এর ফলেই পৃথিবীর বুকে আজ আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা পেয়েছি নিজস্ব একটা ভূখণ্ড, একটা নিজস্ব পতাকা। * জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ তাই সবার। এই স্বাধীন দেশে তাই সবার রয়েছে সমান অধিকার। এ দেশটাকে সুন্দর করে গড়ার দায়িত্বও আমাদের সবার। * লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা জীবনপণ যুদ্ধ করেছিলেন, শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়ে বেঁচে আছেন। সাধারণ মানুষ যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন তাদের অবদানও অনেক। তাদের সবার অসামান্য অবদানের জন্যই আমরা পেয়েছি আমাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। * মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে আমরা সবাই একত্রে শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। এভাবে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.