পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় টিউটোরিয়াল -৯৩

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সিনিয়র শিক্ষক, উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ,উত্তরা, ঢাকা

ব্রিটিশ শাসন
[পূর্বে প্রকাশিত অংশের পর]
প্রশ্ন : বাংলার শিক্ষায় ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব কী ছিল?
উত্তর : ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়। বাংলার শিক্ষায় ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব ছিল নিুরূপ :
* ইংরেজদের মাধ্যমে এ দেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয়। * শিক্ষা বিস্তারে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। * ছাপাখানার বিকাশে জ্ঞান বিস্তারের সুযোগ বাড়ে।
* আধুনিক ও ইংরেজি শিক্ষার ফলে এ দেশে ক্রমে একটা ইংরেজি শিক্ষিত শ্রেণী গড়ে ওঠে। এদের একাংশের মধ্যে নতুন চেতনার বিকাশ ঘটতে থাকে।
* এরা নিজেদের সমাজে বহুকাল ধরে প্রচলিত নানা কুসংস্কার, কুপ্রথা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন। এদের হাত ধরেই উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে। যার ফলে সামাজিক সংস্কারসহ শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। নবজাগরণের কয়েকজন প্রধান ব্যক্তি ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ।
* মুসলমানদের সামাজিক সংস্কার ও আধুনিক শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নবাব আবদুল লতিফ এবং সৈয়দ আমীর আলী।
প্রশ্ন : ১৮৫৭-এর সিপাহী বিদ্রোহের গুরুত্ব বর্ণনা কর?/১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল (পৃ: ১৯)
উত্তর : সিপাহী বিদ্রোহ
পলাশী যুদ্ধের ঠিক ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বাঙালি সিপাহীরা স্ব স্ব ব্যারাকে যে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়েছিল তা-ই ইতিহাসে সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
গুরুত্ব : ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
* এ বিপ্লব স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। * বাংলায় শুরু হয়ে ইংরেজ অধিকৃত ভারতের অন্যান্য এলাকার সিপাহীদের মধ্যেও এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে সিপাহী মঙ্গল পান্ডের নেতৃত্বে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। ইংরেজরা কঠোরভাবে দমন করল। বিদ্রোহীরা পরাজিত হলেও এ বিদ্রোহের ফলেই কোম্পানির শাসনের অবসান হয়। শুরু হয় ব্রিটিশ রাজ তথা রানী ভিক্টোরিয়ার শাসন। * ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ওঠে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। * সিপাহী বিপ্লবের পর মুসলমানদের প্রতি ইংরেজ সরকারের নীতির পরিবর্তন আসতে থাকে। মুসলমানদের একটি অংশ মনে করে যে, ইংরেজদের অসহযোগিতা করলে সব ক্ষেত্রে তারা পিছিয়েই থাকবে। তাই এ সিপাহী বিপ্লবের পর থেকে ভারতবর্ষে সবাই শিক্ষা বিস্তারে তৎপর হন। শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা, স্বকীয়তা ইত্যাদি বোধের উদয় হয়। ফলে পরবর্তীতে কংগ্রেস দল, মুসলিম লীগ, স্বরাজ পার্টিসহ নানা রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হয়।
সুতরাং ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত করতে, শিক্ষা বিস্তার করতে এই সিপাহী বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ব্যাপক।

No comments

Powered by Blogger.